বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
অফিস ডেস্ক
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ছয় ভাইয়ের পরিবারে মাতম যেন থামছেই না। রানা দাশগুপ্ত ও প্রশাসনের লোকজন তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার পর সন্তানদের নিয়ে নির্বাক বসে থাকেন স্বামীহারা গৃহবধূরা।
খাওয়াদাওয়া, চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা—সর্বোপরি বেঁচে থাকার এক কঠিন সংগ্রাম শুরু হয়েছে পরিবারটির। বেঁচে যাওয়া একমাত্র পুরুষ সদস্য প্লাবন সুশীলও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তিনি সবে এইচএসসি পাস করেছেন। ছয় ভাইয়ের মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছেন প্লাবন। মাঝেমধ্যে অসংলগ্ন কথা বলছেন। তাঁর চিকিৎসাও পরিবারটির কাছে এখন বড় একটি চিন্তা।
মৃণালিনী সুশীল (মানু) গত ৩০ জানুয়ারি হারিয়েছেন স্বামী সুরেন্দ্র সুশীলকে। তাঁর শ্মশানে ধর্মীয় আচার শেষে ফেরার পথে ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে মালুমঘাটের হাসিনাপাড়া এলাকায় একটি পিকআপ তাঁদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে পাঁচজন মারা যান। এরপর গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রক্তিম সুশীল নামের অপর ভাই। আহত বোন হীরা সুশীল এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে মালুমঘাটের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট চার-পাঁচজন শিশু উঠানের একপাশে মাটি নিয়ে মনের আনন্দে খেলছে। বাড়ির উঠানে তখন সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন তাদের মায়েরা। গণ্যমান্য অনেক লোকের উপস্থিতি। তাঁরা সান্ত্বনার পাশাপাশি নানা সাহায্য ও আশ্বাস দিচ্ছিলেন। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বাবাহারা সন্তানদের। তারা এখনো অনুভব করতে পারছে না আপনজনের এই বিয়োগ।
মৃণালিনী সুশীলের আট ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। আট ছেলের মধ্যে তৃতীয় ছেলে হীরক সুশীল আগেই মারা গেছেন। বাকি সাত ছেলের মধ্যে এখন বেঁচে আছেন কেবল প্লাবন সুশীল। নিহত ছয় ভাইয়ের মধ্যে চম্পক সুশীল আগের দুর্ঘটনার কারণে কোনো কাজ করতে পারতেন না। দীপক সুশীল থাকতেন কাতারে। বাবার মৃত্যুর পর বাড়িতে এসেছিলেন। চার দিনের মাথায় মারা গেলেন। দীপকের স্ত্রী মুন্নী সুশীল (পূজা) বলেন, ‘জানি না এখন কীভাবে চলব। কত আশা নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি (দীপক)। একটি মন্দির তোলার জন্য ইটও এনেছিলেন। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’
ভাইদের মধ্যে সপ্তম স্মরণ সুশীল বদরখালী এলাকায় একটি সেলুনের দোকান চালাতেন। তাঁর সদ্যোজাত কন্যার বয়স এখনো এক মাস হয়নি। গতকাল ছোট মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন তাঁর বিধবা স্ত্রী তৃঞ্চা সুশীল। পাশে দাঁড়ানো চার বছরের ছেলে অভি। তৃষ্ণা বলেন, ‘শ্বশুরের শ্রাদ্ধের পর মেয়েটির নাম রাখার কথা ছিল। তা আর হলো না। দোকানের আয় দিয়ে আমরা চলতাম।’
সবার বড় অনুপম সুশীল আজিজনগর এলাকায় পল্লিচিকিৎসক হিসেবে আয়রোজগার করতেন। তাঁর মেয়ে দেবশ্রী সুশীল দশম শ্রেণিতে ও ছেলে অর্ক পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মা পপি সুশীল ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও বেঁচে থাকা নিয়ে কঠিন এক অন্ধকারে।
এ ছাড়া নিরুপম সুশীল চাকরি করতেন চকরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আর রক্তিম সুশীল রামুতে একটি ছোট দোকান চালাতেন।
স্বামী ও ছয় ছেলে হারানো মৃণালিনী এখন দিশাহারা। গতকাল জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে আটটি ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেন। দিয়েছেন কিছু নগদ সাহায্যও। একইভাবে সাহায্য করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সৎসঙ্গ চট্টগ্রাম, ইসকন, পুলিশ প্রশাসনসহ নানা সংস্থা। জেলা প্রশাসক বলেন, অতি দ্রুততর সময়ে চকরিয়া মালুমঘাট নাথপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাঁদের আটটি ঘর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সাধ্যমতো কর্মসংস্থানের আশ্বাসও দেন তিনি।
মৃণালিনী বলেন, ‘আশ্বাস দিয়েছেন। এখন জানি না কী করব। কীভাবে চলব। এত দিন ছেলেদের আয়রোজগার ছিল। এখন ছোট ছেলেটিকে সুস্থ করাও একটা বড় কাজ।’
মালুমঘাটের সোয়াজিনিয়াপাড়ার যে ঘরটিতে এখন মৃণালিনীরা থাকেন, তা মূলত বন বিভাগের জায়গার ওপর। আশপাশের অনেকের মতো তাঁরাও এখানে থাকছেন ১০ বছর ধরে। তাঁদের আদি বাড়ি কুতুবদিয়ায়।
দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন রানা দাশগুপ্তর
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত মালুমঘাট পৌঁছান গতকাল বেলা একটার দিকে। তিনি ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানান।
এ সময় রানা দাশগুপ্ত বলেন, আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন পিকআপটি একবার চাপা দেওয়ার পর পেছনে গিয়ে আবার এসে আহত ব্যক্তিদের চাপা দিয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে ওই চালক এটা কী ইচ্ছাকৃতভাবে পেছনে দিয়েছেন, নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা বের করার দায়িত্ব পুলিশের। যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে মামলার ধারায় পরিবর্তন আসবে। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় বছরের কারাদণ্ড, পরিকল্পিত দুর্ঘটনার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড—এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললে ইতিমধ্যে তাঁদের এক আত্মীয়কে হুমকি দেওয়া হয়। তাই এই প্রশ্নগুলো এসেছে।
এ ঘটনায় পিকআপের চালক সাইফুল ইসলামকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জানতে চাইলে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘গাড়িটি কেন ব্যাক করেছিল কিংবা তখন কী হয়েছিল, সম্ভাব্য সব কারণ ধরে তদন্ত চলছে। এখন মোটর আইনে মামলাটি আছে। যদি মনে হয় তাঁর অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল, তাহলে ধারা পরিবর্তন হবে।’
এদিকে আহত বোন হীরা সুশীল এখনো মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি আগের চেয়ে সুস্থ। হীরার ডান পায়ে রড লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ফেটে যাওয়া লিভারে অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁর ছেলে দুটিও এখন ছোট। বাড়ি মহেশখালীতে। স্বামীর সামান্য আয়ে কীভাবে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা করাবেন, সেই শঙ্কায় আছেন তিনি। অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। কেউ কেউ সাহায্য করেছেন।
এই আশ্বাস, সাহায্য ও সহানুভূতিই এখন পুরো পরিবারটির বড় শক্তি। তবে শোকের আয়ু ফুরালে তা আর কতটা থাকবে, তা নিয়েও চিন্তায় মৃণালিনী সুশীল।
প্রকাশ: ৪৫০ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫০ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫০ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫০ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫০ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫২ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৪ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৫৬ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬১ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে
প্রকাশ: ৪৬৩ দিন আগে